মসজিদে থাকা বা ঘুমানো

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে শরী‘আতের বিভিন্ন কাজ মসজিদে করা হ’ত। যেমন-
১) মসজিদে কোন কিছু বণ্টন করা (বুখারী হা/৪২১)
২) মসজিদে খাওয়া (বুখারী হা/৪২২)
৩) মসজিদে বিচার করা (বুখারী হা/৪২৩)
৪) মসজিদে ঘুমানো (বুখারী হা/৪৩৯)
৫) মসজিদে কবিতা পাঠ করা (বুখারী হা/৪৫৩)
৬) মসজিদে দ্বীনী প্রশিক্ষণ দেয়া (বুখারী হা/৪৫৪) ইত্যাদি।

তাবলীগ জামাতের মুসল্লীগণের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েজ হবে কি?
অভিযোগ খণ্ডন-১
প্রথমে মসজিদে ঘুমানো সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস জেনে রাখুন – ইমাম বুখারী (রহ.) [মৃত ২৫৬ হিজরী] সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায় রেখেছেনﺑﺎﺏ ﻧَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ (মহিলাদের জন্য মসজিদে ঘুমানো)

এ অধ্যায়ে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ “ﺃَﻥَّ ﻭَﻟِﻴﺪَﺓً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺳَﻮْﺩَﺍﺀَ ﻟِﺤَﻲٍّ ﻣِﻦْ …ﻓَﺠَﺎﺀَﺕْ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺄَﺳْﻠَﻤَﺖْ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻟَﻬَﺎ ﺧِﺒَﺎﺀٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺃَﻭْ ﺣِﻔْﺶٌ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺄْﺗِﻴﻨِﻲ ﻓَﺘَﺤَﺪَّﺙُ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﻓَﻼَ ﺗَﺠْﻠِﺲُ ﻋِﻨْﺪِﻱ ﻣَﺠْﻠِﺴًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﺎﻟَﺖْﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻮِﺷَﺎﺡِ ﻣِﻦْ ﺗﻌَﺎﺟِﻴﺐِ ﺭَﺑِّﻨَﺎ … ﺃَﻻَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻣِﻦْ ﺑَﻠْﺪَﺓِ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﺃَﻧْﺠَﺎﻧِﻲ

একটি বাঁদীর ঘটনা। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আয়শা (রাঃ) তিনি বলেন মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। সহীহ বুখারী হাঃ নং ৪৩৯ -এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ‘হানাফী’ ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা আইনী (রহ.) বলেনﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺑﻄﺎﻝ ﻓﻴﻪ ﺃﻥ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﻣﺴﻜﻦ ﻭﻻ ﻣﻜﺎﻥ ﻣﺒﻴﺖ ﻳﺒﺎﺡ ﻟﻪ ﺍﻟﻤﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﻭ ﺍﻣﺮﺃﺓ

ইবনে বত্তাল (রহঃ) বলেছেনএ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জায়েয। (উমদাতুল কারীবুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থঅতঃপর ইমাম বুখারী (রহঃ) আরেকটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেনﺑَﺎﺏ ﻧَﻮْﻡِ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ অর্থাৎ ‘পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো’। এ অধ্যায়ে দলিল হিসেবে তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নিজের সম্পর্কে বলেন,
ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ” ﺃَﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﻨَﺎﻡُ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﺎﺏٌّ ﺃَﻋْﺰَﺏُ ﻟَﺎ ﺃَﻫْﻞَ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﻣَﺴْﺠِﺪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ . ﻭﻟﻔﻆ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺷﻴﺒﺔﻛﻨﺎ ﻭﻧﺤﻦ ﺷﺒﺎﺏ ﻧﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﻧﻘﻴﻞﻭﻫﻜﺬﺍ ﻟﻔﻆ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ .

অর্থাৎতিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী)

জামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবী শাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী (রহঃ) (মৃত ৮৫৫ হি.) বলেনﻭﻫﻮ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻟﻐﻴﺮ ﺍﻟﻐﺮﻳﺐ অর্থাৎ এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়।

(উমদাতুল কারী) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) [মৃত ৮৫২ হি.] বলেনﻗﻮﻟﻪ: ” ﺑﺎﺏ ﻧﻮﻡ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ” ﺃﻱ ﺟﻮﺍﺯ ﺫﻟﻚ، ﻭﻫﻮ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ، অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। [ফাতহুল বারী]

) হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন” ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑَﻴْﺖَ ﻓَﺎﻃِﻤَﺔَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ، ﻓَﻘَﺎﻝَﺃَﻳْﻦَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﻤِّﻚِ؟ ﻗَﺎﻟَﺖْﻛَﺎﻥَ ﺑَﻴْﻨِﻲ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﻓَﻐَﺎﺿَﺒَﻨِﻲ ﻓَﺨَﺮَﺝَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻘِﻞْ ﻋِﻨْﺪِﻱ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟِﺈِﻧْﺴَﺎﻥٍﺍﻧْﻈُﺮْ ﺃَﻳْﻦَ ﻫُﻮَ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﻓَﻘَﺎﻝَﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻫُﻮَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺭَﺍﻗِﺪٌ، ﻓَﺠَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﻀْﻄَﺠِﻊٌ ﻗَﺪْ ﺳَﻘَﻂَ ﺭِﺩَﺍﺅُﻩُ ﻋَﻦْ ﺷِﻘِّﻪِ ﻭَﺃَﺻَﺎﺑَﻪُ ﺗُﺮَﺍﺏٌ، ﻓَﺠَﻌَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﻤْﺴَﺤُﻪُ ﻋَﻨْﻪُ، ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُﻗُﻢْ ﺃَﺑَﺎ ﺗُﺮَﺍﺏٍ، ﻗُﻢْ ﺃَﺑَﺎ ﺗُﺮَﺍﺏٍ .

অর্থাৎ একদিন রাসূলুল্লাহ সা. হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রাঃ) পাননি। জিজ্ঞেস করলেনআলী কোথায়ফাতেমা বললেনআমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেনতাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানালআলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারী)

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেনﺃَﻥَّ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ ﺍﻟْﻐِﻔَﺎﺭِﻱَّ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺨْﺪُﻡُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓَﺮَﻍَ ﻣِﻦْ ﺧِﺪْﻣَﺘِﻪِ، ﺁﻭَﻯ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻫُﻮَ ﺑَﻴْﺘُﻪُ، ﻳَﻀْﻄَﺠِﻊُ ﻓِﻴﻪِ، ﻓَﺪَﺧَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪَ ﻟَﻴْﻠَﺔً، ﻓَﻮَﺟَﺪَ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ ﻧَﺎﺋِﻤًﺎ ﻣُﻨْﺠَﺪِﻟًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ، ﻓَﻨَﻜَﺘَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ ﺑِﺮِﺟْﻠِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﺍﺳْﺘَﻮَﻯ ﺟَﺎﻟِﺴًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ “: ﺃَﻟَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﻧَﺎﺋِﻤًﺎ؟ “، ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺑُﻮ ﺫَﺭٍّﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻓَﺄَﻳْﻦَ ﺃَﻧَﺎﻡُ، ﻫَﻞْ ﻟِﻲ ﻣِﻦْ ﺑَﻴْﺖٍ ﻏَﻴْﺮُﻩُ؟،ﻗﺎﻝ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻭﺭﻭﻯ ﺑﻌﻀﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﺷﻬﺮ ﺑﻦ ﺣﻮﺷﺐ ﻭﻓﻴﻪ ﻛﻼﻡ ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻖ

হযরত আবু যর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর খেদমত করতেন। অবসর হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেনআবউ যর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবু যর (রাঃ) উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনতুমি এখানে ঘুমিয়ে কেনআবু যর বললেনহে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আরএ ছাড়া কি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৬৯২৮মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস ২০২৩)

অন্য বর্ণনায় রয়েছেﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﺪﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ  ﺳﻠﻢ ﻓﺈﺫﺍ ﻓﺮﻍ ﻣﻦ ﺧﺪﻣﺘﻪ ﺃﺗﻰ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺎﺿﻄﺠﻊ ﻓﻴﻪﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻲ ﻓﻲ ﺍﻷﻭﺳﻂ ﻭﻓﻴﻪ ﺷﻬﺮ ﻭﻓﻴﻪ ﻛﻼﻡ ﻭﻗﺪ ﻭﺛﻖ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেনমসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আল মুজামুল আওসাততাবারানীমাজমাউয যাওয়াইদ হাঃ ২০২৪)

মোট কথা হযরত আবু যর (রাঃ)-এর থাকার মত কোন ঘরই ছিল না। তিনি সব সময়ই মসজিদে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন দিনই তাঁকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি।

খলীফা হযরত উমর ও হযরত উসমান (রাঃ) বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছেসাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী (রাঃ) বলেন, ” ﺃَﻧَّﻪُ ﺭَﺃَﻯ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣُﺴْﺘَﻠْﻘِﻴًﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻭَﺍﺿِﻌًﺎ ﺇِﺣْﺪَﻯ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺄُﺧْﺮَﻯ ” ﻭَﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺷِﻬَﺎﺏٍ، ﻋَﻦْ ﺳَﻌِﻴﺪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻤُﺴَﻴِّﺐِ، ﻗَﺎﻝَﻛَﺎﻥَ ﻋُﻤَﺮُ ﻭَﻋُﺜْﻤَﺎﻥُ ﻳَﻔْﻌَﻠَﺎﻥِ ﺫَﻟِﻚَ . আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দেখেছিমসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেনহযরত উমর ও উসমান (রাঃ) ও এভাবে মসজিদে ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী)

হযরত হাসান বছরী (রহঃ) (মৃত ১১০ হিজরী) বলেনﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﻧﺎﺋﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻟﻴﺲ ﺣﻮﻟﻪ ﺃﺣﺪ ﻭﻫﻮ ﺃﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﻭﻗﺪ ﻧﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺴﻠﻒ অর্থাৎ আমি হযরত উসমান (রাঃ) কে দেখেছি মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর পাশে কেউ নেই। অথচ তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন। হযরত হাসান আরো বলেনসাহাবা তাবেয়ীদের অনেকেই মসজিদে ঘুমাতেন। (তাবারীউমদাতুল কারী)

এ বিষয়ে মহান তাবেয়ীদের কয়েকজনের মতামত তুলে ধরা হল-
۱ . ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻗﺎﻝ ﺳﺄﻟﺖ ﺳﻠﻴﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻳﺴﺎﺭ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﻛﻴﻒ ﺗﺴﺄﻟﻮﻥ ﻋﻦ ﻫﺬﺍ ﻭﻗﺪ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻴﻪ
) হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেনহযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলামমসজিদে ঘুমানোর বিধান কীতিনি উত্তরে বললেনতোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন করআহলে ছুফফা তো মসজিদেই থাকতেনমসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৪৯১১)

٢ . ﻋﻦ ﻳﻮﻧﺲ ﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ ﺑﻦ ﺳﻴﺮﻳﻦ ﻳﻨﺎﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ
) হযরত ইউনুস (রহঃ) বলেনআমি তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে সীরীনকে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা)

٣ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﺴﺠﺪ ﻳﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﻭﻳﻨﺎﻡ ﻓﻴﻪ
৩. বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ. এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেনঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৪৯১৩)

٤ . ﻋﻦ ﺑﻦ ﺟﺮﻳﺞ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻟﻌﻄﺎﺀ ﺃﺗﻜﺮﻩ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻗﺎﻝ ﺑﻞ ﺃﺣﺒﻪ
৪. ইবনে জুরাইজ (রহঃ) বলেনআমি হযরত আতা (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলামমসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপছন্দ করেনবললেননাবরং মসজিদে ঘুমানোকে আমি পছন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাঃ ৪৯১৭)

٥ . ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﻟﻤﺴﻴﺐ ﺇﻧﻪ ﺳﺌﻞ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻳﻦ ﻛﺎﻥ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﻳﻌﻨﻲ ﻳﻨﺎﻣﻮﻥ ﻓﻴﻪ
৫. হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস করা হলমসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কীতিনি উত্তরে বললেনআহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন তাহলেঅর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট)। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হ ৪৯২২)

٦ . ﻋﻦ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻧﺠﻴﺢ ﻗﺎﻝ ﻧﻤﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﻓﺎﺣﺘﻠﻤﺖ ﻓﻴﻪ ﻓﺴﺄﻟﺖ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺟﺒﻴﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﺫﻫﺐ ﻭﺍﻏﺘﺴﻞ ﻳﻌﻨﻲ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻬﻪ
৬. হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন আমি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস করলামকি করববলেনগোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হাদীসঃ ৪৯২৩)

۷ . ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻤﺮﻭ ﺑﻦ ﺩﻳﻨﺎﺭ : ﻛﻨﺎ ﻧﺒﻴﺖ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻋﻠﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ .
৭. হযরত আমর ইবনে দীনার বলেনসাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ)- এর খিলাফত কালে আমরা মসজিদেই রাত যাপন করতাম। (ফাতহুল বারীইবনে রজব)

সারকথা হলনবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লামখলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমরহযরত উসমানহযরত আলী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরহযরত আবু যর গিফারী (রাঃ) ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন।

ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণআবু হানীফামালেকশাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ (রহঃ) বলেছেননিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (বিঃদ্রঃ ফাতহুল বারীইবনে রজবই‘লামুস্সাজিদ বিআহ্কামিল মাসাজিদমুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃত ৭৯৪ হিঃপৃঃ ৩০৫-৩০৭)

প্রশ্নঃ তাবলীগ-জামায়াতের মানুষেরা যে মসজিদে রান্নাখাওয়া-দাওয়াগোসল এবং ঘুম ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করে থাকে এটার কোন হাদীসের ভিত্তি আছে কিনা? নবীজী (সাঃ) এবং তার সাহাবীগণ কি কখনও মসজিদে এই সকল কাজ সম্পন্ন করেছেন কিযদি করে থাকে তা হলে দলীল কোথায়?

উত্তরঃ মসজিদে কোন তাবলীগ জামাতের সাথি মসজিদে রান্না করেন না। না মসজিদে গোসল করেন। তারা কেবল মসজিদে ঘুমান। বাকি কাজগুলো বাহিরেই করেন। মসজিদে ঘুমানোর অনেক প্রমাণ হাদীসে বিদ্যমান। তাছাড়া যেহেতু তাবলীগী সাথীরা মসজিদে প্রবেশের সময় ইতিকাফের নিয়ত করে থাকেনআর যিনি মসজিদে ইতিকাফে থাকবেনতিনিতো মসজিদেই খাবার দাবার ঘুমাবেন। এটাইতো স্বাভাবিক।

মসজিদে ঘুমানোর কয়েকটি প্রমাণ নিচে উপস্থাপন করা হল-
قَالَتْ: «فَجَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَتْ»، قَالَتْ عَائِشَةُ: «فَكَانَ لَهَا خِبَاءٌ فِي المَسْجِدِ হযরত আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক মহিলা ইসলাম গ্রহণ করলোতারপর মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। (সহীহ বুখারী হাদীস নং ৪৩৯)

হযরত সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) বলেন ” جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ بَيْتَ فَاطِمَةَ فَلَمْ يَجِدْ عَلِيًّا فِي الْبَيْتِ، فَقَالَأَيْنَ ابْنُ عَمِّكِ؟ قَالَتْكَانَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ شَيْءٌ فَغَاضَبَنِي فَخَرَجَ فَلَمْ يَقِلْ عِنْدِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِإِنْسَانٍانْظُرْ أَيْنَ هُوَ، فَجَاءَ فَقَالَيَا رَسُولَ اللَّهِ، هُوَ فِي الْمَسْجِدِ رَاقِدٌ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ وَهُوَ مُضْطَجِعٌ قَدْ سَقَطَ رِدَاؤُهُ عَنْ شِقِّهِ وَأَصَابَهُ تُرَابٌ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ يَمْسَحُهُ عَنْهُ، وَيَقُولُقُمْ أَبَا تُرَابٍ، قُمْ أَبَا تُرَابٍএকদিন রাসূলুল্লাহ সা.  হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রাঃ) পাননি। জিজ্ঞেস করলেনআলী কোথায়ফাতেমা বললেনআমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেনতাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানালআলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারীহাদীস নং-৪৪১৪৩০)

عَنْ عَبَّادِ بْنِ تَمِيمٍ، عَنْ عَمِّهِ، أَنَّهُ «رَأَى رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَلْقِيًا فِي المَسْجِدِ، وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الأُخْرَى» وَعَنْ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ المُسَيِّبِ، قَالَ: «كَانَ عُمَرُ، وَعُثْمَانُ يَفْعَلاَنِ ذَلِكَ» হযরত আব্বাদ বিন তামীম তার চাচা থেকে বর্ণনা করেনতিনি দেখেছেনরাসূলুল্লাহ সা. মসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। (সহীহ বুখারীহাদীস নং-৪৭৫৪৬৩)

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন أَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ، آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :” أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ “، قَالَ أَبُو ذَرٍّيَا رَسُولَ اللَّهِ، فَأَيْنَ أَنَامُ، هَلْ لِي مِنْ بَيْتٍ غَيْرُهُ؟،قال فى المجمعرواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق

হযরত আবুযর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেনআবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর (রাঃ) উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনতুমি এখানে ঘুমিয়ে কেনআবুযর বললেনহে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আরএ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হাদীস ২৬৯২৮ মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীষ ২০২৩)

অন্য বর্ণনায় রয়েছেأنه كان يخدم النبي صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته أتى المسجد فاضطجع فيه.رواه الطبراني في الأوسط وفيه شهر وفيه كلام وقد وثق তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেনমসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাততাবারানী। মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস ২০২৪)

عن الحارث بن عبد الرحمن قال سألت سليمان بن يسار عن النوم في المسجد فقال كيف تسألون عن هذا وقد كان أهل الصفة ينامون فيه ويصلون فيه হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেনহযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলামমসজিদে ঘুমানোর বিধান কীতিনি উত্তরে বললেনতোমরা কেন এ বিষয়ে প্রশ্ন করআহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেনমসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হাদীস ৪৯১১)

সুতরাং বুঝা গেলতাবলীগের সাথীদের মসজিদে থাকা ও ঘুমানো এটি কোন দোষনীয় বিষয় নয়। রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন আমল বর্ণিত হয়েছে। তাই এটিকে খারাপ বলার কোন সুযোগ নেই।

প্রশ্নঃ নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদের ফ্যান লাইট ব্যবহার এবং ঘুমানোর হুকুম কিআমি অনেক সময় নামাজের বেশ কিছু সময় আগে আমাদের মসজিদে গিয়ে ফ্যানলাইট জ্বালিয়ে কখনও কোরআন তেলাওয়াতকখনো নামাজকখনো জিকির আবার কখনো বা শুয়ে থাকি। এবং কখনো নামাজের পরেও এরকম করে থাকি। বিশেষ করে নামাজের পরে তেলাওয়াতের আমল করি। আবার অনেক সময় আমার সাথে কেউ দেখা করতে এলে মাঝে মাঝে মসজিতে বসেই আলাপ করি (আজেবাজে কোন আলাপ হয় না কারণ যারা দ্বীনদার তাদের নিয়েই মসজিদে বসি) এ সময়ও ফ্যান ইত্যাদি চালিয়ে থাকি। আমার প্রশ্ন হলো উপরে উল্লেখিত সময় মসজিদের ফ্যানলাইট তথা মসজিদের জিনিস ব্যবহার করা কি জায়েজ?

উত্তরঃ যেহেতু মসজিদে আসবাব দান করা হয়ে থাকে,নামায ও ইবাদত করার জন্য। সেই হিসেবে যদি মসজিদ কর্তৃপক্ষ নামায ছাড়া অন্য সময়ের জন্য ইবাদত করার আম অনুমতি দিয়ে রাখে এবং যারা মসজিদে দান করে থাকেনতারাও যেকোন সময় ইবাদত করার জন্য আম অনুমতি প্রদান করে থাকেতাহলে নামাযের সময় ছাড়াও অন্য সময়ও মসজিদে প্রবেশ করে ফ্যান লাইট জ্বালিয়ে ইবাদত করা জায়েজ আছে।

কিন্তু যদি শুধু নামায পড়ার সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদের আসবাব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কর্তৃপক্ষ বা যিনি দান করেছন তিনি। তাহলে নামাযের সময় ছাড়া অন্য সময় মসজিদের আসবাব ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করলে এর সমমূল্য মসজিদে দান করে দেয়া আবশ্যক। মসজিদের আসবাব ব্যবহার করা ছাড়া এমনিতে মসজিদে গিয়ে বসে থাকাতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ঘুমানোর স্থান বানানো উচিত নয়। মসজিদ ইবাদতের স্থানশুধু ঘুমানোর স্থান নয়। হ্যাঁযদি নফল ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ঘুমায় তাহলে গোনাহ হবে না, যেমন তাবলীগের ভাইয়েরা থাকেন এভাবে থাকা যাবে।

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَى فِي خَرَابِهَا أُولَئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَنْ يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (سورة البقرة-114)

وَلَوْ وَقَفَ عَلَى دُهْنِ السِّرَاجِ لِلْمَسْجِدِ لَا يَجُوزُ وَضْعُهُ جَمِيعَ اللَّيْلِ بَلْ بِقَدْرِ حَاجَةِ الْمُصَلِّينَ وَيَجُوزُ إلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفِهِ إذَا اُحْتِيجَ إلَيْهِ لِلصَّلَاةِ فِيهِ، كَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ وَلَا يَجُوزُ أَنْ يُتْرَكَ فِيهِ كُلَّ اللَّيْلِ إلَّا فِي مَوْضِعٍ جَرَتْ الْعَادَةُ فِيهِ بِذَلِكَ كَمَسْجِدِ بَيْتِ الْمَقْدِسِ وَمَسْجِدِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ، أَوْ شَرَطَ الْوَاقِفُ تَرْكَهُ فِيهِ كُلَّ اللَّيْلِ كَمَا جَرَتْ الْعَادَةُ بِهِ فِي زَمَانِنَا، كَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الوقف، الفصل الاول من الباب الحادى عشر فى المسجد-2/459، مطبوعة مصر، وكذا فى البحر الرائق، كتاب الوقف، فصل احكام المسجد-5/250، خانية على هامش الهندية، كتاب الوقف، باب الرجل يجعل داره مسجدا-3/299

প্রশ্নঃ তাবলীগ জামাতের মসজিদে থাকা বা ঘুমানো কি বেদআত?
উত্তরঃ দয়া করে নিচের হাদিসগুলোর দিকে খেয়াল করুনঃ ইমাম বুখারী রহঃ (মৃ.২৫৬ হি.) সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায় রেখেছেন “باب نَوْمِ الْمَرْأَةِ فِي الْمَسْجِدِ ‘মহিলাদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয’। এ অধ্যায়ে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন: عَنْ عَائِشَةَ "أَنَّ وَلِيدَةً كَانَتْ سَوْدَاءَ لِحَيٍّ مِنْ ...فَجَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ فَكَانَ لَهَا خِبَاءٌ فِي الْمَسْجِدِ أَوْ حِفْشٌ قَالَتْ فَكَانَتْ تَأْتِينِي فَتَحَدَّثُ عِنْدِي قَالَتْ فَلاَ تَجْلِسُ عِنْدِي مَجْلِسًا إِلاَّ قَالَتْوَيَوْمَ الْوِشَاحِ مِنْ تعَاجِيبِ رَبِّنَا ... أَلاَ إِنَّهُ مِنْ بَلْدَةِ الْكُفْرِ أَنْجَانِي একটি বাদীর ঘটনা। ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আয়শা রা.। তিনি বলেন মহিলাটি ইসলাম গ্রহণ করলে তাঁর থাকার জন্য মসজিদে একটি তাবু খাটানো হল। (সহীহ বুখারী হা. নং ৪৪৯ই:ফা:)

এ হাদীসে ব্যাখ্যায় ‘হানাফী’ ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা আইনী রহ. বলেন: قال ابن بطال فيه أن من لم يكن له مسكن ولا مكان مبيت يباح له المبيت في المسجد سواء كان رجلا أو امرأة ইবনে বত্তাল রহ. বলেছেনএ হাদীস থেকে বুঝা যায় রাত যাপনের স্থান নেই এমন যে কোন নারী-পুরুষের জন্য মসজিদে থাকা জয়েয। (উমদাতুল কারী বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ) অতঃপর ইমাম বুখারী আরেকটি অধ্যায়ের শিরোনাম দিয়েছেন بَاب نَوْمِ الرِّجَالِ فِي الْمَسْجِدِ অর্থাৎ ‘পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয’। এ অধ্যায়ে দলিল হিসেবে তিনটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) নিজের সম্পর্কে বলেন عَبْدُ اللَّهِ، " أَنَّهُ كَانَ يَنَامُ وَهُوَ شَابٌّ أَعْزَبُ لَا أَهْلَ لَهُ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ . ولفظ ابن ابى شيبة-كنا ونحن شباب نبيت في عهد رسول الله صلى الله عليه و سلم في المسجد ونقيلوهكذا لفظ الترمذىতিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। স্ত্রী-পুত্র কেউ ছিল না। তখন তিনি মসজিদে নববীতেই (রাতে ও দিনে) ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারীজামে তিরমিযী (তিরমিযী শরীফ) ও ইবনে আবীশাইবার বর্ণনায় বক্তব্যটি তুলে ধরা হয়েছে এভাবে ‘আমারা একদল যুবক রাতে ও দিনে মসজিদে শয়ন করতাম’। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন وهو جواز النوم في المسجد لغير الغريب ... এতে স্থানীয় লোকদের জন্যও (যারা মুসাফির নয়) মসজিদে ঘুমানো জায়েয বলে প্রমাণিত হয়। (উমদাতুল কারী)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ.৮৫২ হি.) বলেন قوله: "باب نوم الرجال في المسجدأي جواز ذلك، وهو قول الجمهور، অর্থাৎ পুরুষদের জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয। এটাই অধিকাংশের মত। (ফাতহুল বারী)

) হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেনএকদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি। জিজ্ঞেস করলেন আলী কোথায়ফাতেমা বললেনআমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে বললেন তাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানালআলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গায়ের বালি ঝেড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। (সহীহ বুখারী)

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী রহ. (মৃ.৮৫৫ হি.) বলেন فيه إباحة النوم في المسجد لغير الفقراء ولغير الغريب وكذا القيلولة في المسجد فإن عليا لم يقل عند فاطمة رضي الله تعالى عنها ونام في المسجد وفي كتاب المساجد لأبي نعيم من حديث بشر بن جبلة عن أبي الحسن عن عمرو بن دينار عن نافع بن جبير بن مطعم عن أبيه يرفعه لا تمنعوا القائلة في المسجد مقيما ولا ضيفاএ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় ঘর-বাড়িহীন দরিদ্র ও ভীনদেশী মুসাফির ছাড়া স্থানীয়দের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। অনুরূপ মসজিদে কাইলূলা (দিবসকালীন বিশ্রাম) করাও জায়েয। কারণ (জায়েয বলেই) হযরত আলী (রা.) ফাতেমা রা. এর ঘরে বিশ্রাম না করে মসজিদে গিয়ে ঘুমালেন। ইমাম আবু নু‘আইম ইসফাহানী রহ. ‘কিতাবুল মাসাজিদে’হযরত জুবাইর ইবনে মুতইম (রা) থেকে বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মেহমান বা স্থানীয় যে কেউ মসজিদে বিশ্রাম নিতে আসলে তাকে বাধা দিও না। (উমদাতুল কারী)

) তৃতীয় বর্ণনায় আহলে ছুফ্ফার বিবরণ তুলে ধরেছেন। তাঁরা মসজিদে নববীতেই রাত দিন থাকতেন। এ অধ্যায়ে উল্লিখিত হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে রজব রহ. (মৃ.৭৯৫ হি.) বলেন وليس المقصود من ذلك في هذا الباب إلا نومهم في المسجد ولا شك في أن أهل الصفة كانوا ينامون في المسجد ، لم يكن لهم مأوى بالليل والنهار غير الصفة ، এখানে এ হাদীস বর্ণনা করার উদ্দেশ্য আহলে ছুফ্ফার মসজিদে ঘুমানোর কথা তুলে ধরা। সন্দেহ নেই আহলে ছুফ্ফা মসজিদেই ঘুমাতেন। রাত দিনে তাদের ঘুমানোর আর কোন স্থান ছিল না। ইবনে সা‘দ রহ. (মৃ.২৩০ হি.) বর্ণনা করেন عن يزيد بن عبد الله بن قسيط ، قال : كان أهل الصفة ناسا فقراء من أصحاب رسول الله لا منازل لهم ، فكانوا ينامون على عهد رسول الله في المسجد ويظلون فيه ، ما لهم مأوى غيره ،..ذكره ابن رجب فى فتح البارى له আহলে ছুফ্ফা ছিলেন রাসূলের একদল দরিদ্র সাহাবী। তাদের কোন বাড়ি ঘর ছিল না। তাঁরা মসজিদেই ঘুমাতেনমসজিদেই থাকতেন। এছাড়া তাদের আর কোন আশ্রয় ছিল না। (তাবাকাতুল কুবরা ইবনে সাদফাতহুল বারী ইবনে রাজব) এ সংক্রান্ত আরো কয়েকটি হাদীস

) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছিমসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। (সহীহ বুখারী)

৫. হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেনأَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ، آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :" أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ "، قَالَ أَبُو ذَرٍّيَا رَسُولَ اللَّهِ، فَأَيْنَ أَنَامُ، هَلْ لِي مِنْ بَيْتٍ غَيْرُهُ؟،قال فى المجمعرواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق

হযরত আবুযর রা. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন আবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেনআবুযর বললেন হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ?! এ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হা.২৬৯২৮ মাজমাউযযাওয়াইদ হা. ২০২৩)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে- أنه كان يخدم النبي صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته أتى المسجد فاضطجع فيه.رواه الطبراني في الأوسط وفيه شهر وفيه كلام وقد وثق তিনি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেনমসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাততাবারানী। মাজমাউযযাওয়াইদ হা. ২০২৪)

মোট কথা হযরত আবুযর রা. এর থাকার মত কোন ঘরই ছিল না। তিনি সব সময়ই মসজিদে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন দিনই তাঁকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। বুখারী শরীফের এক বর্ণনায় রয়েছেসাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ আনসারী রা. বলেন أَنَّهُ رَأَى رَسُولَ اللَّهِ مُسْتَلْقِيًا فِي الْمَسْجِدِ وَاضِعًا إِحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الْأُخْرَى " وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، قَالَكَانَ عُمَرُ وَعُثْمَانُ يَفْعَلَانِ ذَلِكَআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছিমসজিদে এক পা অপর পায়ের উপর রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন হযরত উমর ও উসমান রা. ও এভাবে মসজিদে ঘুমাতেন। (সহীহ বুখারী)

হযরত হাসান বছরী (মৃত. ১১০ হি.) রা. বলেন قال رأيت عثمان بن عفان نائما فيه ليس حوله أحد وهو أمير المؤمنين قال وقد نام في المسجد جماعة من السلف ... আমি হযরত উসমান (রা)কে দেখেছি মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তাঁর পাশে কেউ নেই। অথচ তখন তিনি আমীরুল মুমিনীন। হযরত হাসান আরো বলেন সাহাবা তাবেয়ীদের অনেকেই মসজিদে ঘুমাতেন। (তাবারীউমদাতুল কারী) এ বিষয়ে মহান তাবেয়ীদের কয়েকজনের মতামত তুলে ধরছি

۱عن الحارث بن عبد الرحمن قال سألت سليمان بن يسار عن النوم في المسجد فقال كيف تسألون عن هذا وقد كان أهل الصفة ينامون فيه ويصلون فيه -হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেনহযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদে ঘুমানোর বিধান কীতিনি উত্তরে বললেন তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন করআহলে ছুফ্ফাতো মসজিদেই থাকতেনমসজিদেই নামাজ পড়তেন। অর্থাৎ মসজিদে ঘুমানো জায়েয। আহলে ছুফ্ফার মসজিদে ঘুমানোটাই এর দলীল। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)

٢عن يونس قال رأيت بن سيرين ينام في المسجد -হযরত ইউনুস রহ. বলেন আমি তাবেয়ী ইবনে সীরীনকে মসজিদে ঘুমাতে দেখেছি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা )

٣عن الحسن قال كان له مسجد يصلي فيه وينام فيه -বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত হাসান বছরী রহ. এর একটি মসজিদ ছিল। তিনি তাতে নামাজও পড়তেনঘুমাতেনও। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৩)

٤عن بن جريج قال قلت لعطاء أتكره النوم في المسجد قال بل أحبه -ইবনে জুরাইজ রহ. বলেন আমি হযরত আতা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম মসজিদে ঘুমানোকে কি আপনি অপসন্দ করেনবললেন নাবরং মসজিদে ঘুমানোকে আমি পসন্দ করি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১৭)

٥سعيد بن المسيب إنه سئل عن النوم في المسجد فقال أين كان أهل الصفة يعني ينامون فيه -হযরত সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিবকে জিজ্ঞেস করা হল মসজিদে ঘুমানো জায়েয আছে কীতিনি উত্তরে বললেন আহলে ছুফ্ফা কোথায় থাকতেন তাহলেঅর্থাৎ তারা মসজিদেই ঘুমাতেন। (সুতরাং মসজিদে ঘুমানো জায়েয এবং এটি সুস্পষ্ট) (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২২)

٦عن بن أبي نجيح قال نمت في المسجد الحرام فاحتلمت فيه فسألت سعيد بن جبير فقال اذهب واغتسل يعني ولم ينهه -হযরত ইবনে আবী নাজীহ বলেন আমি মসজিদে হারামে ঘুমিয়েছিলাম। তখন আমার স্বপ্নদোষ হল। তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে জুবাইর রহ. কে জিজ্ঞেস করলাম কি করববলেন গোসল করে আস। অর্থাৎ তিনি তাকে মসজিদে ঘুমাতে নিষেধ করেননি। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯২৩)

۷وقال عمرو بن دينار : كنا نبيت في المسجد على عهد ابن الزبير -হযরত আমর ইবনে দীনার বলেন সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. এর খিলাফত কালে আমরা মসজিদেই রাত যাপন করতাম। (ফাতহুল বারীইবনে রজব।)

সারকথানবীজী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়সাল্লামখলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমরহযরত উসমানহযরত আলী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরহযরত আবুযর গিফারী রা. ও আহলে ছুফ্ফা সকলেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন। তাই তাবেয়ী-তবে তাবেয়ীনের অনেকেই মসজিদে ঘুমিয়েছেন এবং নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। ফলে প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামগণ আবু হানীফামালেকশাফেয়ী ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানোকে জায়েয বলেছেন। তবে ইমাম মালেক ও আহমদ রহ. বলেছেন নিজের পৃথক ঘুমানোর জায়গা থাকা সত্ত্বেও মসজিদকে নিয়মিত ঘুমানোর জায়গা বানিয়ে নেয়া উচিত নয়। হাঁ ইবাদত ও নেক কাজের উদ্দেশ্যে সকল মাযহাবেই নির্দ্বিধায় মসজিদে ঘুমানো জায়েয। (দ্র. ফাতহুল বারী ইবনে রজবই‘লামুস্-সাজিদ বিআহ্কামিল মাসাজিদ মুহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ যারকাশী (মৃ.৭৯৪ হি.) পৃ. ৩০৫-৩০৭)

হানাফী আলেমদের মতেবদরুদ্দীন আইনী রহ. (মৃ. ৮৫৫ হি.) হানাফী মাযহাবের একজন উল্লেখযোগ্য মুহাদ্দিস ও ফকীহ। মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়া সম্পর্কে তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্য পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তথাপি হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আলফাতাওয়াল হিন্দিয়া’য় (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী) উদ্ধৃত হয়েছে وَلَا بَأْسَ لِلْغَرِيبِ وَلِصَاحِبِ الدَّارِ أَنْ يَنَامَ في الْمَسْجِدِ في الصَّحِيحِ من الْمَذْهَبِ وَالْأَحْسَنُ أَنْ يَتَوَرَّعَ فَلَا يَنَامُ كَذَا في خِزَانَةِ الْفَتَاوَى বিশুদ্ধ মত অনুসারে মুসাফির ও স্থানীয় উভয়ের জন্যই মসজিদে ঘুমানো জায়েয। তবে উত্তম হল (অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া) না ঘুমানো। খিযানাতুল ফাতাওয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

তবে অপ্রয়োজনে ঘুমানো উচিত নয় উল্লেখ করে অনত্র বলেন وَيُكْرَهُ النَّوْمُ وَالْأَكْلُ فيه لِغَيْرِ الْمُعْتَكِفِ وإذا أَرَادَ أَنْ يَفْعَلَ ذلك يَنْبَغِي أَنْ يَنْوِيَ الِاعْتِكَافَ فَيَدْخُلَ فيه وَيَذْكُرَ اللَّهَ تَعَالَى بِقَدْرِ ما نَوَى أو يُصَلِّيَ ثُمَّ يَفْعَلَ ما شَاءَ كَذَا في السِّرَاجِيَّةِই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়া মসজিদে ঘুমানো ও খাওয়া-দাওয়া করা মাকরূহ (তবে এটি মাকরূহে তাহরীমী তথা হারাম নয়বরং মাকরূহে তান্যীহী অর্থাৎ অপসন্দনীয় ও অনুচিত কাজ)। তাই যদি কেউ মসজিদে ঘুমাতে চায়তাহলে তার উচিৎ ই‘তিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করে ইচ্ছানুসারে আল্লাহর যিকর অথবা নামায পড়ে নেবে। তার পর যা ইচ্ছা করবে। সিরাজিয়া। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)

ইমাম আলাউদ্দীন হাছ্কাফী রহ. (মৃ. ১০৮৮ হি.) এর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় ইবনে আবীদীন শামী রহ. (মৃ.১২৬০ হি.) তাঁর বিখ্যাত ফিকাহ গ্রন্থ “ফতুয়ায়ে শামীতে” লেখেন قال فى الدر المختارلكن قال ابن كمال لا يكره الأكل والشرب والنوم فيه مطلقا ونحوه في المجتبىوقال ابن عابدين فى شرحه: ( قوله لكن إلخ ) استدراك على ما في الأشباه وعبارة ابن الكمال عن جامع الإسبيجابي لغير المعتكف أن ينام في المسجد مقيما كان أو غريبا أو مضطجعا أو متكئا رجلاه إلى القبلة أو إلى غيرها فالمعتكف أولى ا هـ ونقله أيضا في المعراج وبه يعلم تفسير الإطلاققال ط : لكن قوله رجلاه إلى القبلة غيرمسلم لما نصوا عليه من الكراهة ومفاد كلام الشارح ترجيح هذا الاستدراكوالظاهر أن مثل النوم الأكل والشرب إذا لم يشغل المسجد ولم يلوثه لأن تنظيفه واجب كما مر.

ইবনু কামাল পাশা রহ.‘জামে ইস্বীজানীর’ উদ্ধৃতিতে বলেন ই‘তিকাফকারী ছাড়া অন্যদের জন্যও মসজিদে ঘুমানো জায়েয। ব্যক্তি স্থানীয় হোক বা মুসাফির। চিৎ হয়ে ঘুমাক কিংবা কিবলার দিকে বা যে কোন দিকে পা দিয়ে। সুতরাং ই‘তিকাফকারীর জন্য মসজিদে ঘুমানো জায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। শামী রহ. বলেন মি‘রাজুদদিরায়া কিতাবেও তা উদ্ধৃত করেছেন। তবে তাঁর বক্তব্যে কিবলার দিকে পা দেওয়া জায়েয হওয়ার বিষয়টি অগ্রহণযোগ্য। বরং তা মাকরূহ। শামী রহ. বলেন মসজিদে ঘুম খাবার-দাবার জায়েয বটেকিন্তু তা যেন মসজিদকে অপবিত্র না করে। কারণ মসজিদ পবিত্র রাখা ওয়াজিব। (রদ্দুল মুহতার ফাতাওয়ায়ে শামী)

সুতরাং মসজিদে ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়াই ঘুমানো জায়েয। তবে ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল। তবে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক। উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায়

১) যার থাকার যায়গা নেইযে মসাফির বা পথিক (এখানে মুসাফির বলতে বাড়ি থেকে দূরে যে কোন লোককেই বুঝানো হয়েছে। ফিকহ শাস্ত্রের পরিভাষার মুসাফির উদ্দেশ্য নয়)
২) যে ইবাদত বন্দেগী তথা নেক কাজ করার জন্য মসজিদে থাকতে চায়।
৩) যে ইতিকাফের নিয়ত করেছে।
৪) যে দীনী ইলম জ্ঞান শিখতে বা শিখাতে চায় তাদের সকলের জন্যত মসজিদে থাকা অবশ্যই জায়েয।
৫) বরং এসকল উদ্দেশ্য ছাড়াও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ইতিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল। বলা বাহুল্য যে,

তাবলীগ জামাতের লোকেরা সাধারণত মুসাফিরই হয়ে থাকে। অন্তত বাড়ী থেকে এত দূরে যায় যেখান থেকে বাড়ীতে এসে ঘুমাতে হলে তাঁর দাওয়াতের কাজতাঁর দীন শিক্ষা করা বা দীন শিক্ষা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হবে।

তা ছাড়া তাবলীগে গমনের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হল তালীমের মাধ্যমেমোজাকারা (পরষ্পরে আলোচনা) ও মোশাওয়ারার মাধ্যমে নিজে দীন শিক্ষা করাঅন্য নতুন সাথীদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া এবং এলাকার মসলামান ভাইদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া ও তাদেরকে মসজিদমুখী করা।

তাছাড়া তাবলীগে গমনের আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য হলমানুষ আপন বাড়িতে নিজ পরিবেশে থেকে গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের গুনাহের অভ্যাস ছাড়িয়ে নেক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার জন্যই বছরে এবং মাসে কিছু দিন আল্লাহর ঘরে নেক কাজের উদ্দেশ্যে থাকা।

) লোকেরা যখন তাবলীগের উদ্দেশ্যে বের হয়তখন মারকাজ থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে কঠুরতার সাথে। তাদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত যিম্মাদারকে তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব থাকে। তখন তাদের বলা হয় সব সময় নফল ইতিকাফের নিয়ত করে রাকতে। এবং মসজিদের সকল আদব রক্ষা করে চলতে।

সুতরাং উপরে উল্লেখিত চারটি কোন একটি শর্ত না থাকলেও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। কোন একটি শর্ত পাওয়া গেলেত অবশ্যই যায়েজ। আর যদি চারটি শর্তই থাকে তাহলে তাদের মসজিদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে সাহস কার আছে বলেন! বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হুকুম করেছেন “তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারীইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারী তথা নামাযীদের জন্য পবিত্র করে রাখ” (২ সূরা বাকারা আয়াত ১২৫)

এখানে আল্লাহ তাআলা ইতিকাফকারীদের জন্য তাঁর ঘরকে সাজিয়ে রাখতে বলেছেন। সুতরাং কেউ যদি মসজিদে থাকার সময় ইতিকাফের নিয়ত করে তাহলে কার সাধ্য আছে আল্লাহর মেহমানকে আল্লাহর ঘরে থাকতে বাধা দেয়ার! আসলে আমাদের সমাজের সাধারণ মুসলমানরা না জানার কারণে বা কিছু মুর্খস্বার্থান্বেশীদাওয়াতজীবী ও ওয়াজজীবী দাওয়াত খাওয়া ও ওয়াজেব্যবসা করাই যাদের পেশা এমন লোকদের কথায় কথায় কত বড় অন্যায় করে আসছে! এটাত আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রুতা! আল্লাহর দুশমনি! হায়কে বুঝাবে তাদের। এরা বুঝতেও রাজি না। আল্লাহএরাত আমাদেরই জ্ঞাতি ভাই। এদের তুমি সঠিক জ্ঞান দান কর। আমাদেকে এবং তাদেরকে সকলকে ক্ষমা করে দাও।

মসজিদে সাময়িকভাবে ঘুমানো ও খাওয়া-দাওয়া করা জায়েয। আব্দুল্লাহ্ ইবনু ওমর (রাঃ) অবিবাহিত যুবক ছিলেনযিনি রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মসজিদে ঘুমাতেন। (নাসাঈ হা/৭২২)। (বুখারী শরীফেও এই রুপ হাদীস আছে। ৪২১ নং হাদীস)

তিনি বলেনআমরা যুবকরা রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে মসজিদে ঘুমাতাম। (তিরমিযী হা/৩২১ইবনু মাজাহ হা/৭৫১)

মসজিদে খাওয়া-দাওয়া করাও বৈধ। ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারেছ (রাঃ) বলেনআমরা রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় মসজিদে রুটি ও গোশত খেতাম’। (ইবনু মাজাহসনদ হাসানহা/৩৩০০, ‘খাদ্য’ অধ্যায়)

তাবলীগ জামাতের মসজিদে ঘুমানোর বৈধাতা ও আনুষাঙ্গিক বিষয়
এক ভাই আমাকে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন কেরছিলেন এবং সাথে একটি প্রবন্ধের ফটোকপি পাঠিয়ে ছিলেন। যাতে লেখা হয়েছে তাবলীগ জামাতের মসিজদে রাত্রি যাপন হারামতারা মসজিদে বায়ূত্যাগ করে যা গুনাহের কাজহানাফী মাযহাবে একদিন এক রাতের কম কোন ইতিকাফ নেইরোযা না রেখে ইতিকাফ হয় না ইত্যাদি। অকথ্য ভাষায় অভদ্রতার চরম সীমা অতিক্রম করে তিনি লিখেছেন। তবে এখানে আমি তার পরিচয় উল্লেখ করিনি। কারণব্যক্তির পরিচয়ের মধ্যে কোন কল্যান নেই। বিধান জানাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

আমি প্রশ্নকারীকে বিষয়গুলো মুখে বললাম। তখন তিনি আমাকে সেগুলো লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেন। এ বিষয়ের দলিল প্রমাণ হাদীস ও ফিকহের কিতাবে ভরপুর। যা একত্র করতে চাইলে রীতিমত একটি পুস্তকে হয়ে যাবে। কিন্তু তখন আমি চরম ব্যস্ততার মাঝে তাড়াহুড়ো করে কিছু কথা লিখে দিয়েছিলাম। বিষয়টি যেহেতু অনেকেই জানতে চায়তাই আমার ইচ্ছা হল আপাতত এতটুকুই পাঠকের হাতে তুলে দেই।

১. মসজিদে ঘুমানোর হুকুম কী?
২. নফল ইতিকাফের সর্বনিম্ম পরিমাণ কতটুকুনফল ই‘তিকাফের জন্য কি রোজা রাখা শর্ত?
৩. মসজিদে বাতকর্ম (বায়ু ত্যাগ)  করার বিধান কী?

সুতরাং মসজিদে ই‘তিকাফের নিয়ত ছাড়াই ঘুমানো জায়েয। তবে ই‘তিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল। তবে সর্বাবস্থায়ই মসজিদের আদবের প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক।

উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায়
যার থাকার যায়গা নেইযে মসাফির বা পথিক (এখানে মুসাফির বলতে বাড়ি থেকে দূরে যে কোন লোককেই বুঝানো হয়েছে। ফিকহ শাস্ত্রের পরিভাষার মুসাফির উদ্দেশ্য নয়)
২) যে ইবাদত বন্দেগী তথা নেক কাজ করার জন্য মসজিদে থাকতে চায়
যে ইতিকাফের নিয়ত করেছে,
যে দীনী ইলম জ্ঞান শিখতে বা শিখাতে চায় তাদের সকলের জন্যত মসজিদে থাকা অবশ্যই জায়েয।
বরং এসকল উদ্দেশ্য ছাড়াও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। তবে এক্ষেত্রে ইতিকাফের নিয়ত করে নেয়া ভাল।

বলা বাহুল্য যে,
তাবলীগ জামাতের লোকেরা সাধারণত মুসাফিরই হয়ে থাকে। অন্তত বাড়ী থেকে এত দূরে যায় যেখান থেকে বাড়ীতে এসে ঘুমাতে হলে তাঁর দাওয়াতের কাজতাঁর দীন শিক্ষা করা বা দীন শিক্ষা দেওয়ার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যর্থ হবে।

তা ছাড়া তাবলীগে গমনের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হল (ফাজায়েলে আমল ইত্যাদি)  তালীমের মাধ্যমেমোজাকারা (পরষ্পরে আলোচনা) ও মোশাওয়ারার মাধ্যমে নিজে দীন শিক্ষা করাঅন্য নতুন সাথীদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া এবং এলাকার মসলামান ভাইদেরকে দীন শিক্ষা দেওয়া ও তাদেরকে মসজিদমুখী করা।

তাছাড়া তাবলীগে গমনের আরেকটি প্রধান উদ্দেশ্য হলমানুষ আপন বাড়িতে নিজ পরিবেশে থেকে গুনাহে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের গুনাহের অভ্যাস ছাড়িয়ে নেক কাজের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলার জন্যই বছরে এবং মাসে কিছু দিন আল্লাহর ঘরে নেক কাজের উদ্দেশ্যে থাকা।

) লোকেরা যখন তাবলীগের উদ্দেশ্যে বের হয়তখন মারকাজ থেকে তাদের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে কঠুরতার সাথে। তাদের পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত যিম্মাদারকে তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব থাকে। তখন তাদের বলা হয় সব সময় নফল ইতিকাফের নিয়ত করে রাকতে। এবং মসজিদের সকল আদব রক্ষা করে চলতে।

সুতরাং উপরে উল্লেখিত চারটি কোন একটি শর্ত না থাকলেও মসজিদে ঘুমানো যায়েজ। কোন একটি শর্ত পাওয়া গেলেত অবশ্যই যায়েজ। আর যদি চারটি শর্তই থাকে তাহলে তাদের মসজিদে থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তোলে সাহস কার আছে বলেন!

বিশেষ করে আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে হুকুম করেছেন তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারীইতিকাফকারী ও রুকু সেজদাকারী তথা নামাযীদের জন্য পবিত্র করে রাখ” (সূরা বাকারা আয়াত ১২৫)

এখানে আল্লাহ তাআলা ইতিকাফকারীদের জন্য তাঁর ঘরকে সাজিয়ে রাখতে বলেছেন। সুতরাং কেউ যদি মসজিদে থাকার সময় ইতিকাফের নিয়ত করে তাহলে কার সাধ্য আছে আল্লাহর মেহমানকে আল্লাহর ঘরে থাকতে বাধা দেয়ার! আসলে আমাদের সমাজের সাধারণ মুসলমানরা না জানার কারণে বা কিছু মুর্খস্বার্থান্বেশীদাওয়াতজীবী ও ওয়াজজীবী দাওয়াত খাওয়া ও ওয়াজেব্যবসা করাই যাদের পেশা এমন লোকদের কথায় কথায় কত বড় অন্যায় করে আসছে! এটাত আল্লাহর বিরুদ্ধে শত্রতা! আল্লাহর দুশমনি! হায়কে বুঝাবে তাদের। এরা বুঝতেও রাজি না। আল্লাহএরাত আমাদেরই জ্ঞাতি ভাই। এদের তুমি সঠিক জ্ঞান দান কর। আমাদেকে এবং তাদেরকে সকলকে ক্ষমা করে দাও।

(২) ই‘তিকাফের সময় ও এর জন্য রোজা কেউ কেউ বলে থাকেনইতিকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। তাবলীগীরা যেহেতু রোজা রাখেনাতাই তাদের ইতিকাফের নিয়ত করলেও তা ধর্তব্য হবে না! কিন্তু তাদের এ বক্তব্য নিতান্তই অবান্তর। কারণ ই‘তিকাফ তিন প্রকার। ওয়াজিবসুন্নত ও নফল। প্রথম দুই প্রকার ই‘তিকাফের জন্য (ইমাম আবুহানীফাআবু ইউসূফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতানুসারে) রোজা রাখা শর্ত। (দ্র. আহকামুল কুরআন জাছ্ছাছ) কিন্তু নফল ই‘তিকাফের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন নেই। যে কোন মুহুর্তে হয়। এবং এর জন্য রোজা রাখাও শর্ত নয়।

ইবনে আবীদীন শামী রহ. বলেনوأقله نفلا ساعة ) من ليل أو نهار عند محمد وهو ظاهر الرواية عن الإمام لبناء النفل على المسامحة وبه يفتى ইমাম মুহম্মদ রহ. এর মতে নফল ই‘তিকাফের সর্বনিম্ম পরিমাণ এক মহুর্ত। ইমাম ইবুহানীফা রহ. এর মতও এটিই। তাঁর থেকে এ মতটি ‘জাহেরী রেওয়াতের’ আলোকে অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য ও সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণিত। এমতের উপরই ফতোয়া দেওয়া হয়। (রদ্দুল মুহ্তার ফাতওয়ায়ে শামী)

ই‘তিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত কি নাএ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানীফা রহ. থেকে দুই ধরণের বর্ণনাই রয়েছে। তবে এর মধ্যে ‘জাহেরে রেওয়ায়াত’ হলনফল ই‘তিকাফের জন্য রোজা রাখা জরুরী নয়। কারণ নফল ই‘তিকাফ এক মহুর্তের জন্যও হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ফকীহ ইবনে নুজাইম রহ. বলেন

قوله : وأقله نفلاساعة ) لقول محمد في الأصل إذا دخل المسجد بنية الاعتكاف فهو معتكف ما أقام تارك له إذا خرج فكان ظاهر الرواية واستنبط المشايخ منه أن الصوم ليس من شرطه على ظاهر الرواية ؛ لأن مبنى النفل على المسامحة حتى جازت صلاته قاعدا ، أو راكبا مع قدرته على الركوب والنزول ولا يخفى أن ما ادعاه أمر عقلي مسلم وبهذا لا يندفع ما صرح به المشايخ الثقات من أن ظاهر الرواية أن الصوم ليس من شرطه وممن صرح به صاحب المبسوط وشرح الطحاوي وفتاوى قاضي خان والذخيرة والفتاوى الظهيرية والكافي للمصنف والبدائع والنهاية وغاية البيان والتبيين وغيرهم والكل مصرحون بأن ظاهر الرواية أن الصوم ليس من شرطه

অর্থাৎ ই‘তিকাফ সম্পর্কে ‘জাহেরে রেওয়ায়াতের’ আলোকে দুটি বিষয় প্রমাণিত:
১. (নফল) ই‘তিকাফের সর্বনিম্ম পরিমাণ এক মহুর্ত
২. রোযা রাখা (নফল) ই‘তিকাফের জন্য শর্ত নয়। ফুকাহা-মাশায়েখ স্পষ্ট ভাষায় একথা উল্লেখ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের
১.আলমাবসূত
২.শরহু মুখতাছারুত্তাহাবী
৩.ফাতওয়ায়ে কাযী খান
৪.যাখীরা
৫.ফাতাওয়ায়ে জহীরিয়া
৬.আল কাফী
৭.বাদাইউছ ছানায়ে
৮.আননিহায়া
৯.গায়াতুল বয়ান
১০.তাব্য়ীন ইত্যাদি কিতাবে একথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। (আল-বাহ্রুর রায়েকআরো দ্রষ্টব্য ফাতহুল কাদীররাদ্দুল মুহ্তার (ফাতাওয়ায়ে শামী)আলমুহীতুল বুরহানী ইত্যাদি)

এটিই হানাফী মাযহাবে গ্রহণযোগ্য মত। ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর সপক্ষে দলীল হিসেবে বর্ণনা করেন أخبرنا محمد عن أبي يوسف عن ليث بن أبي سليم عن الحكم عن مقسم عن علي بن أبي طالب رضوان الله عليه أنه قال ليس على المعتكف صوم إلا أن يوجبه على نفسه-المبسوط لمحمد.

হযরত আলী রা. বলেন ই‘তিকাফকারীর জন্য রোজা রাখা জরুরী নয়। তবে সে যদি নিজের উপর (মান্নতের মাধ্যমে) রোজা ওয়াজিব করে তাহলে ভিন্ন কথা। (কিতাবুল আছল মাবসূতে মুহাম্মদ)

সুতরাং দ্বীনি প্রয়োজনে বা কোন ভাল উদ্দেশ্যে মসজিদে থাকতে হলে নফল ই‘তিকাফের নিয়ত করে নিতে কোন সমস্যা নেই। এতে মসজিদে ঘুমানো জায়েযত হবেইউপরন্তু তার ঘুমখাওয়া-দাওয়া সবটাই ইবাদতে গণ্য হবে। হাঁমসজিদে অবস্থানকারীদের জন্য মসজিদের আদবের প্রতি যত্নবান হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারা জানা না থাকার কারণে বা ভুলে আদবের খেলাফ কিছু হয়ে গেলেযে জানে তার দায়িত্ব হল তাকে জানিয়ে দেয়া।

এজন্যই তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে যখন কোন জামাতকে কোন মসজিদে পাঠানো হয়তখন অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মসজিদের আদব সমূহ তাদের রপ্ত করিয়ে দেওয়া হয়। তাতে সাধারণ শিক্ষিত-অশিক্ষত নানা ধরণের লোক থাকে বলেই তাদের মধ্যে এক্ষেত্রে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। আমাদের দায়িত্ব হল কারো ভুল ত্রুটি ধরা পড়লে তাকে মার্জিত ভাবে বলে দেওয়া। কিন্তু একে কেন্দ্র করে ‘তাবলীগ জামাতের’ কোন দূর্ণাম করার সুযোগ নেই। এবং কারো ব্যক্তিগত ভুল-ত্রুটির জন্য ‘মসজিদে ঘুমানো জায়েযএ হুকুম পরিবর্তন করে ফেলার মত দুঃসাহস আমাদের হয় কি করে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হিফাযত করেন।

(৩) মসজিদে বাতকর্ম (বায়ূ ত্যাগ) করা:
আবার কেউ কেউ নির্লজ্জের মত তাবলীগীদের বদনাম করার জন্য বলে এরা মসজিদ নাপাক করে। এদেরকে মসজিদে থাকতে দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু তাঁদের এ মন্তব্যটি বড়ই দুঃখ জনক। মূলত এটি বিদ্বেষ প্রসূত। হিংসা বিদ্বেষের বসবর্তী হয়েই মানুষ এ ধরণের অপকথা বলতে থাকে। বস্তুত মসজিদ ইবাদতের স্থান। একে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পবিত্র রাখা জরুরী। অপরদিকে আমাদেরকে নামাযতিলাওয়াতযিকিরতালীম (দ্বীনি শিক্ষা-দীক্ষার কাজ) ও ওয়াজ-নসীহতের জন্য আমাদের মসজিদে অবস্থান করতে হয়। ফলে যে কোন সময় বায়ূ নিঃসারণের সম্ভাবনা থাকে। কারণ বায়ূ ত্যাগের বিষয়টি অনেক সময়ই ইচ্ছাধীন থাকেনা। আপনিতেই বের হয়ে যায়। তাই অনিচ্ছাকৃত ভাবে বায়ূ ত্যাগ হয়ে গেলে তাতে কোন সমস্যা নেই। বরং হাদীস থেকে বুঝা যায় নামাযে থাকাকালীন সময়ে বা নামায শেষে বায়ূ ত্যাগের প্রয়োজন হলে ইচ্ছাকৃত বায়ূ নিঃসারণ করলেও গুনাহ হবে না। এখানে কয়েকটি হাদীস উদ্ধৃত করছি

১. হযরত আয়শা রা. বলেন عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْقَالَ النَّبِيُّ: " إِذَا أَحْدَثَ أَحَدُكُمْ فِي صَلَاتِهِ فَلْيَأْخُذْ بِأَنْفِهِ ثُمَّ لِيَنْصَرِفْ ". রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন তোমাদের কেউ যদি নামাযে ‘বায়ূ ত্যাগ’ করেতাহলে সে যেন নাক চেপে ধরে নামাযের স্থান থেকে বের যায়। (অতঃপর অযু করে বাকী নামায পূর্ণ করে) (সুনানে আবু দাউদ হা. ১১১৪)

২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন أنَّ رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: " إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلَمْ يَدْرِ زَادَ أَمْ نَقَصَ فَلْيَسْجُدْ سَجْدَتَيْنِ وَهُوَ قَاعِدٌ فَإِذَا أَتَاهُ الشَّيْطَانُ، فَقَالَإِنَّكَ قَدْ أَحْدَثْتَ، فَلْيَقُلْكَذَبْتَ إِلَّا مَا وَجَدَ رِيحًا بِأَنْفِهِ أَوْ صَوْتًا بِأُذُنِهِ রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন আর যদি শয়তান কারো মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে বলেতোমার অযু ভেঙে গেছতাহলে সে তাকে বলবে মিথ্যা কথা। তাই বায়ূ নিঃসরণের সন্দেহ হলেই সে নামায ত্যাগ করবে না। হাঁযখন তার নাকে দুর্গন্ধ লাগেঅথবা নিজ কানে বায়ূ ত্যাগের আওয়াজ শুনে (অর্থাৎ বায়ূ ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হলে) তবেই সে নামায ত্যাগ করতে পারবে। (সুনানে আবু দাউদ হা. ১০২৯)

অর্থাৎ বায়ূ ত্যাগের চাপ অনুভব করলে তা আটকানোর চেষ্টা করবে। যদি সম্ভব না হয়তাহলে বায়ূ ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরই নামায ভাঙবে। অন্যথায় নয়।

৩.  হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ، مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ، وَتَقُولُ الْمَلَائِكَةُاللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، حَتَّى يَنْصَرِفَ أَوْ يُحْدِثَ "، قُلْتُمَا يُحْدِثُ؟ قَالَيَفْسُو أَوْ يَضْرِطُرواه مسلم والبخارىআল্লাহর কোন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের স্থানে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকেততক্ষণ সে নামাযেই থাকে। ফেরেশতারা বলতে থাকেনআল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন। তার উপর রহমত নাযিল করুন। যখনি সে স্থান ত্যাগ করে বা অযু ভেঙে যায় তখন আর সে নামাযি গণ্য হয় না এবং ফেরেশতারাও দোয়া বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেনআমি হযরত আবু হুরায়রা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম অযু ভাঙা মানে কীতিনি বলেন বায়ূ ত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিমহা. ১০৬৭ সহীহ বুখারী)

ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে এ হাদীসের শিরোনাম দিয়েছেন‘ باب الحدث في المسجدِ ’ “মসজিদে বায়ূত্যাগ (জায়েজ হওয়ার) অধ্যায়”। সুতরাং এ হাদীস থেকে বুঝা যায় নামাযের স্থানে বসেই সে বায়ূ ত্যাগ করেছে। তথাপি তাকে হাদীসে কোন রূপ তিরস্কার করা হয়নি। তাই মসজিদে বায়ূত্যাগ করা কোন রূপ গোনা‎‎হ্ কাজ নয়। কিন্তু মসজিদে এরূপ ইচ্ছাকৃত না করাটাই ভাল। তাই ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বলা হয়েছে وقال فى الهنديةوَاخْتُلِفَ في الذي يَفْسُو في الْمَسْجِدِ فلم يَرَ بَعْضُهُمْ بَأْسًا وَبَعْضُهُمْ قالوا لَا يَفْسُو وَيَخْرُجُ إذَا احْتَاجَ إلَيْهِ وهو الْأَصَحُّ كَذَا في التُّمُرْتَاشِيِّانتهىى من كتاب الكراهيةমসজিদে ইচ্ছাকৃত বায়ূ ত্যাগ করা বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের একদল এটাকে কোন সমস্যা মনে করেননি। অপর একদল ফকীহ বলেন মসজিদে ইচ্ছাকৃত বায়ূ ত্যাগ করবে না। বরং প্রয়োজন অনুভব করলে বাইরে চলে যাবে। তামারতাশী বলেছেন এমতটি অধিক বিশুদ্ধ (অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত বায়ূত্যাগ থেকে বিরত থাকা। বলাবাহুল্য ভদ্রজন কখনোই মানুষের ভরা মজলিসে ইচ্ছাকৃত বায়ূ ত্যাগ করেন না) (আলমগীরীকিতাবুল কারাহিয়্যা)

সুতরাং যে ব্যক্তি ই‘তিকাফ করে বা মসজিদে কোন কারণে ঘুমায়অথবা মসজিদে নামায পড়তে আসেতার থেকে অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত বায়ূ ত্যাগ হয়ে যায়। এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। এবং তাঁর হৃদয়ে যদি আল্লাহর ঘরের প্রতি কোনরূপ তাচ্ছিল্য না থাকে তাহলে তাতে গুনাহ্ কিছু আছে বলে আমাদের জানা নেই।

প্রশ্ন: সূরা জুমআর দশ নং আয়াতের ভুল ব্যাখ্যাঃ নামায শেষে মসজিদে থাকা নিষেধঅনেকেই সূরা আজ জুমআর ১০ নং আয়াত দেখাইয়া দাওয়াতে তাবলীগের বিরোধিতা করে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে যেআল্লাহ তাআলা নামায শেষে ব্যবসা বাণিজ্য করতে বের হয়ে যেতে বলেছেন। তাই নামায শেষে মসজিদে বসে তাবলীগী জামাতের দাওয়াততালীম ইত্যাদি জায়েজ নয়।

জবাব: কুরআন হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুর্খ ব্যক্তি ছাড়া এমন উক্তি কেউ করতে পারে না। আমরা আয়াতটি দেখি। আল্লাহ তাআলা কী বলেছেন?

فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٦٢:١٠
অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করও আল্লাহর অধিক স্মরণ কর। যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমআ-১০)

এবার ১০ নাম্বার আয়াতটি আগের আয়াতটি দেখি আগে আল্লাহ তাআলা কী নির্দেশ দিয়েছেন?
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩
মুমিনগণজুমআর দিনে যখন নামাযের আযান হয়তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা করএবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। (সূরা জুমআ-৯)

৯ নাম্বার আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করলেই বুঝা যায় আল্লাহ তাআলা ১০ নাম্বার আয়াতে কেন নামায শেষেই মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলেছেন। ৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন যারা ক্রয় বিক্রয় করছেতারা আজান শুনে ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করে মসজিতে এসে যেন নামায পড়ে। তারপর বলেছেননামায যখন শেষ এবার বেরিয়ে যাও ক্রয়-বিক্রয়সহ যেসব ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে তোমরা মসজিদে নামায পড়তে এসেছিল। এখন আর ব্যাবসা বাণিজ্য করতে কোন সমস্যা নেই। এর মানে মসজিদে থাকা জায়েজ নেইএমন বোকামীসূলভ কথা গন্ড মুর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না। নামায শেষ হলেই মসজিদ থেকে বের হওয়ার নির্দেশ হলেসাহাবাগণ দ্বীন শিখতেন কোথায় বসেনামায শেষেই সাহাবাগণ বেরিয়ে যেতেন মসজিদ থেকে?

যদি আয়াতটির আক্ষরিক অর্থই পালনীয় হয়ে থাকেতাহলে নামায শেষে মসজিদে বসে থাকা যেমন নিষেধ হয়তেমনি মসজিদ থেকে বের হয়ে আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে পৃথিবীর প্রান্তরে প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়া এবং আল্লাহ তাআলার জিকির অধিক পরিমাণ করাও ফরজ হয়ে যায়। তাই নয়কি?

যারা এ আয়াতের আক্ষরিক অর্থ উদ্দেশ্য নিয়ে নামায শেষে মসজিদে বসে থাকা যাবে না বলে থাকেনতাদের মতে মসজিদ থেকে বেরিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে জিকির করা কী ফরজসকলের জন্য রিজিক তালাশে ঘুরে বেড়ানো ফরজযদি না হয় তাহলে আয়াতের একাংশ নিয়ে এ উদ্ভট ব্যাখ্যা কেন?

যদি মসজিদে বসে থাকা না জায়েজ হয়তাহলে এসব হাদীসের মানে কি?
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন, عن أسماء بنت يزيد أن أبا ذر كان يخدم رسول الله صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته آوى إلى المسجد فاضطجع فيه فكان هو بيته فدخل رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فوجد أبا ذر منجدلا في المسجد فنكته رسول الله صلى الله عليه و سلم برجله حتى استوى جالسا فقال له رسول الله صلى الله عليه و سلم : ” ألا أراك نائما ؟ ” قال : يا رسول الله وأين أنام ؟ وهل لي بيت غيره ؟

قال فى المجمعرواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق

হযরত আবুযর রা. রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেনআবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনতুমি এখানে ঘুমিয়ে কেনআবুযর বললেনহে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আরএ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হাদীস নং-২৭৫৮৮মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস নং- ২০২৩কানযুল উম্মালহাদীস নং-১৪৩৭৯)

অন্য বর্ণনায় রয়েছেعن أبي ذر أنه كان يخدم النبي صلى الله عليه و سلم فإذا فرغ من خدمته أتى المسجد فاضطجع فيه.رواه الطبراني في الأوسط وفيه شهر وفيه كلام وقد وثق

হযরত আবু জর রাঃ রাসূলুল্লাহ সাঃ -এর খেদমত করতেন। যখনই অবসর হতেনমসজিদে এসে শুয়ে আরাম করতেন। (আলমুজামুল আওসাত লিততাবরানীহাদীস নং-৭৯৫০ মাজমাউয যাওয়াইদ হাদীস নং- ২০২৪)

(বিঃদ্রঃ এতগুলো হাদীসের রেফারেন্স যে ভাইদের পছন্দ হল না সেই ভাইদের বলছি আপনাদের বড় বড় আলেমদেরকে নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন আমরা আপনাদের মতামত এবং রেফরেন্স যদি সত্য হয় মেনে নিব আর আমাদের রেফারেন্স সত্য হলে আপনারা মেনে নিবেন। সত্য হচ্ছে স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানা থেকে প্রশাসন থাকতে হবে, হাদীস বিশ্লেষনের জন্য ভাল বিচারক মন্ডলি থাকতে হবে ষ্টামে চুক্তি করে স্বাক্ষর করতে হবে)

1 টি মন্তব্য: